বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন

বাছিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ডিআইজি মিজান উধাও

বাছিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ডিআইজি মিজান উধাও

স্বদেশ ডেস্ক: পুলিশ কর্মকর্তা ও দুদক কর্মকর্তার মধ্যকার ৪০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র। এরই মধ্যে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। ঘুষ নেওয়ার অপরাধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে। বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ তার বিরুদ্ধে খুব শিগগির মামলাও করা হবে।

এদিকে ঢাকা মহানগরের এক সময়ের প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তার পেছনে এখন হন্যে হয়ে ছুটছে দুদক। গ্রেপ্তার এড়াতে ডিআইজি মিজানও হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছেন। বেইলি রোডের বাসা, আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের বাসায়ও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা সোমবার দেশ ছেড়েছেন বলেও দুদকের কাছে তথ্য এসেছে। দুদক সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা ২৪ জুন রাতে দেশত্যাগ করেছেন। তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন, তা জানতে চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। সোমবার মামলা রুজুর পর থেকেই স্ত্রীসহ ডিআইজি মিজান উধাও। স্বামী-স্ত্রীর মোবাইল নম্বরও বন্ধ।

ডিআইজি মিজানের সাময়িক বরখাস্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত মঙ্গলবার জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মো. মিজানুর রহমান, উপপুলিশ মহাপরিদর্শক সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা সমীচীন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত থাকবেন এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ঘুষ হিসেবে পুলিশের ডিআইজি মিজানের ৪০ লাখ টাকা প্রদানের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। তাদের মধ্যে অডিও রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে ঘুষ প্রদানের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। অডিও রেকর্ডের কণ্ঠস্বর পরীক্ষাসহ ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি)’ মাধ্যমে মোবাইল ফোনে উভয়ের কথোপকথন রেকর্ড যাচাই (ফরেনসিক) করে ঘুষের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত নেয় দুদক কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল এক আদেশে খন্দকার এনামুল বাছিরের পলায়ন বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এসবিতে চিঠি পাঠিয়েছেন অভিযোগের অনুসন্ধানী কর্মকর্তা শেখ মো. ফানাফিল্যা।

চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (খন্দকার এনামুল বাছির) বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের সত্যতা দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বক্তব্য গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দিতে তার বরাবর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নয়াপল্টনের একটি হোটেলে ডিআইজি মিজানকে দুদকের মামলার চার্জশিটে রেহাই দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে গোপন মিটিংয়ে অংশ নেওয়া দুদকের সাবেক পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়াসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারির একদিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে তিনি অবশ্যই গ্রেপ্তার হবেন। তিনি চাইলে আত্মসমর্পণও করতে পারেন।

এদিকে খন্দকার এনামুল বাছিরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের অপর ৬ কর্মকর্তাকে ডিআইজি মিজানের ৪০ লাখ টাকা প্রদানের অভিযোগের সংবাদ প্রকাশের পর দুই সাংবাদিককে আপত্তিকর ভাষায় তলবের প্রতিবাদ করেছেন সাংবাদিকরা। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে তলব করে মঙ্গলবার ওই নোটিশ দেয় দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন।

নোটিশের শেষ অংশে বলা হয়, আগামী ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে। ‘আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’-এ বাক্য আপত্তিকর উল্লেখ করে তা সাংবাদিকতার স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষী হিসেবে সাংবাদিকদের তলব করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এতে যদি তদন্ত কর্মকর্তা কোনো ভুল করে থাকেন বা দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দীপু সারোয়ার ও এটিএন নিউজের ইমরান হোসেন সুমনকে তলবের বিষয়ে গতকাল বুধবার দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি।

মো. ফানাফিল্যাকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ‘একই ঘটনায় এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমনকে দেওয়া নোটিশে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গ্রহণ করা হবে’ মর্মে উল্লেখ করেননি, যা অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রচলিত নোটিশের ফরম্যাটবহির্ভূত। আপনি উপযুক্ত একই বিষয়ে বর্ণিত ২ জন ব্যক্তির একজনকে প্রচলিত ফরম্যাট অনুযায়ী এবং অপরজনকে প্রচলিত ফরম্যাটবহির্ভূত নোটিশ প্রদান করে আপনার দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা অসদাচরণের শামিল।’

সাংবাদিকরা বলছেন, নতুন করে দেওয়া এই কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সাংবাদিকদের দ্বিতীয়বার অমর্যাদা করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877